ট্রান্সফরমেশন কাকে বলে এবং বৈশিষ্ট্য

সুপ্রিয় পাঠক বন্ধুরা আজকের এই পর্বে আলোচনার বিষয় ট্রান্সফরমেশন কাকে বলে এবং ট্রান্সফরমেশনের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য গুলি সম্পর্কে।

ট্রান্সফরমেশন বা রূপান্তরভবনের সংজ্ঞা :

যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দাতা কোশ থেকে নির্গত দ্বিতন্ত্রী DNA অণুর একটি অংশ বহিঃকোশীয় মাধ্যমের সাহায্যে গ্রহীতা কোশে প্রবেশ করে গ্রহীতা কোশের DNA অণুর সাথে পুনঃসংযোজন ঘটিয়ে নতুন বৈশিষ্ট্যের সূচনা করে, তাকে রূপান্তরভবন বা ট্রান্সফরমেশন বলে।

Diplococcus pneumoniae ব্যাকটেরিয়ামটি নিউমোনিয়া নামক একটি ফুসফুসীয় রোগের জন্য দায়ী। এই ব্যাকটেরিয়ামে দুটি স্ট্রেন আছে-

 ১. Type II R : এই স্ট্রেনের ব্যাকটেরিয়ামকে অমসৃণ বলে কারণ এদের ক্যাপসুল গঠিত হয় না। দেহে প্রবেশ করলে শ্বেত রক্তকণিকা বা WBC এই স্ট্রেনের ব্যাকটেরিয়াকে খুব সহজেই গ্রাস করে নিতে পারে বলে এই ব্যাকটেরিয়া রোগ সৃষ্টি করতে পারে না। এই স্ট্রেনের ব্যাকটেরিয়াকে মৃদু বা অসংক্রামক বলা হয়।

২. Type III S : এই স্ট্রেনের ব্যাকটেরিয়াম ক্যাপসুল দিয়ে আবৃত থাকে যার ফলে এটি মসৃণ হয়। প্রাণীদেহে প্রবেশ করলে মসৃণ তলের জন্য শ্বেত রক্তকণিকা এদের গ্রাস করতে পারে না। ফলস্বরূপ দ্রুত বংশবিস্তার করে এরা রোগলক্ষণ সৃষ্টি করে। এই জন্য III S টাইপকে তীব্র সংক্রামক বা ভিরুলেন্ট বলা হয়।

পড়ুন : ব্যাকটেরিয়া কাকে বলে ?

ওসওয়াল্ড অ্যাভেরী, কোলিন ম্যাকলিয়ড, ম্যাকলিন ম্যাক কার্টি  চতুর্থ পরীক্ষাটির কারণ ব্যাখ্যা করেন। তাঁদের ব্যাখ্যা অনুযায়ী ব্যাকটেরিয়ার মিশ্রণে (জীবিত IIS + মৃত IIIS) উপস্থিত III S ব্যাকটেরিয়ার পুনরায় বেঁচে ওঠার কোনো সম্ভাবনা নেই বরং ভিরুলেন্ট IIIS মৃত হলেও তার প্রভাবেই সজীব ননভিরুলেন্ট IIRটি ভিরুলেন্ট IIIS ব্যাকটেরিয়ায় রূপান্তরিত হয়। মৃত IIIS ব্যাকটেরিয়া থেকে কোন্ পদার্থ সজীব IIR-কে IIIS বা ভিরুলেন্ট ব্যাকটেরিয়ায় রূপান্তরিতর মাধ্যমে তা দেখার জন্য তিনটি পৃথক পরীক্ষা করা হয়-

১. মৃত IIIS এবং সজীব IIR-এর মিশ্রণে প্রোটিয়েজ দেওয়া হল যা প্রোটিনকে দ্রবীভূত বা বিনষ্ট করে। দেখা গেল এইক্ষেত্রে IIR ব্যাকটেরিয়া IIIS-এ রূপান্তরিত হচ্ছে অর্থাৎ রূপান্তরভবনের জন্য দায়ী পদার্থটি প্রোটিন নয়।

২  উক্ত মিশ্র ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে RNase প্রয়োগ করলেও রূপান্তরভবন প্রক্রিয়াটি ঘটে অর্থাৎ RNA রূপান্তরভবনের জন্য দায়ী নয়।

৩. মৃত IIIS এবং সজীব IIR-এর মিশ্রণে DNase উৎসেচক প্রয়োগ করা হল যা ব্যাকটেরিয়ার কৃষ্টি মাধ্যমে DNA অণু থাকলে তাকে দ্রবীভূত করে দেয়। দেখা গেল যে DNase প্রয়োগের ফলে সজীব II R ব্যাকটেরিয়া III S ব্যাকটেরিয়ায় রূপান্তরিত হয় না। এই পরীক্ষার মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে তাপ প্রয়োগের ফলে মৃত III S ব্যাকটেরিয়ার DNA অণুটি বিভিন্ন খণ্ডে বিভক্ত হয়ে যায় এবং যে খণ্ডটি ক্যাপসুল উৎপাদনকারী জিন বহন করে তা সজীব II R ব্যাকটেরিয়ায় প্রবেশ করে II R ব্যাকটেরিয়ায় ক্যাপসুল সৃষ্টি করে। স্বাভাবিকভাবেই II R ব্যাকটেরিয়া III S ব্যাকটেরিয়া অর্থাৎ ভিরুলেন্ট ব্যাকটেরিয়ায় রূপান্তরিত হয়।

ট্রান্সফরমেশনের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য :

১. এই পদ্ধতি কোশমুক্ত অবস্থায় সংগঠিত হয় অর্থাৎ দাতা কোশের নগ্ন DNA অণু গ্রহীতা কোশে প্রবেশ করে।

২. দাতা কোশটির তাপপ্রয়োগে মৃত্যু, লাইসিস বা বিদারণ অথবা রাসায়নিক নিষ্কাশনের কারণে মুক্ত DNA অণুটির একাংশ রূপান্তরভবনের জন্য ক্রিয়াশীল হয়।

৩. দাতা কোশের DNA অণু গ্রহীতা কোশের DNA অণুর সঙ্গে সংযুক্ত হওয়ার পর রূপান্তরভবন ক্রিয়াটি সম্পন্ন হয়।

৪. রূপান্তরভবনের কারণে দাতা কোশের DNA অণুর মাধ্যমে গ্রহীতা কোশে নতুন বৈশিষ্ট্যের উন্মোচন হয় এবং এই বৈশিষ্ট্য বংশানুক্রমে পরিবাহিত হয়।

৫. স্বাভাবিক অবস্থায় রূপান্তরভবনের হার অত্যন্ত অল্প, প্রতি 100 মিলিয়ন ব্যাকটেরিয়ায় মাত্র ১টি ব্যাকটেরিয়ামে রূপান্তরভবন লক্ষ করা যায়।

Leave a Comment