সুপ্রিয় বন্ধুরা, আজকের এই পাঠটিতে আলোচনা করা হল ব্যাকটেরিওফাজ কাকে বলে এবং ব্যাকটেরিওফাজের বিভিন্ন অংশ সম্পর্কে।
ব্যাকটেরিওফাজ কাকে বলে :
যেসব ভাইরাস ব্যাকটেরিয়াকে আক্রমণ করে এবং ধ্বংস করে তাদেরকে ব্যাকটেরিওফাজ বলে। T2 ফাজ পুচ্ছযুক্ত ব্যাঙাচি আকৃতির। এই ভাইরাস লম্বায় ৬৫-২০০ nm এবং চওড়ায় ৫০-৭০ nm হয়। এর ক্যাপসিডে ক্যাপসোমিয়ারের বিন্যাস বাইনাল প্রকৃতির। এই জাতীয় ফাজের দেহে মোট 4টি অংশ নিয়ে গঠিত-্। মস্তক, গ্রীবা, পুচ্ছ এবং প্রান্তফলক। মস্তকের ভিতর অবস্থানরত DNA তত্ত্ব ছাড়া ফাজের সব অংশই প্রোটিন দিয়ে তৈরি।
১. মস্তক বা মাথা : মস্তকটি লম্বায় ৯৫nm এবং চওড়ায় ৬৫ nm হয়। মস্তক অংশ কুড়িটি ত্রিকোণ ফলক দিয়ে তৈরি হয়। মস্তকের প্রাচীর দ্বিস্তরী প্রোটিন নির্মিত। মস্তকের ভিতর ফাঁপা অংশে ৫০ µm দৈর্ঘ্যের দ্বিতন্ত্রী DNA তত্ত্ব প্যাঁচানো অবস্থায় থাকে। মস্তক প্রাচীর প্রায় ২০০০টি সমান আকৃতিযুক্ত ক্যাপসোমিয়ার নিয়ে গঠিত।
পড়ুন: ব্যাকটেরিয়া কাকে বলে ?
২. গ্রীবা : মস্তকের নীচে অবস্থিত গ্রীবা । গ্রীবা ছোটো ফাঁপা নলাকার। এটি একটি চাকতির মতো গ্রীবা বেষ্টনী বা কলার দিয়ে আবদ্ধ থাকে। গ্রীবানলটি গ্রীবা বেষ্টনীর ভিতরকার ছিদ্রে থাকে। গ্রীবানলটির সামনের দিকের অংশ মস্তক ছিদ্রের মধ্যে এবং পেছনের দিকের অংশটি পুচ্ছ নলের ছিদ্রের মধ্যে প্রবেশ করানো থাকে। গ্রীবা বেষ্টনী মস্তক প্রাচীর এবং পুচ্ছ বেষ্টনীর মাঝখানে থাকে। গ্রীবা বেষ্টনী অংশে যুক্ত সূক্ষ্ম রোমের মতো গঠনগুলিকে হুইস্কার বলা হয়।
৩. পুচ্ছ : গ্রীবার পিছনের দিকে থাকে পুচ্ছটি। পুচ্ছটি লম্বায় ১১০nm এবং ব্যাস ১৮nm। পুচ্ছের দুইটি অংশ থাকে। ভিতরের দীর্ঘ, সরু, ফাঁপা নলাকার অংশটিকে পুচ্ছনল বা কোর বলে। পুচ্ছনলের মধ্যেকার ব্যাস ৮nm। কোরের সামনের দিকের অংশ গ্রীবানলের সঙ্গে যুক্ত থাকে এবং পিছনের দিকের অংশ প্রান্তফলকের কেন্দ্রে ছিদ্রের মধ্যে ঢোকানো থাকে। পুচ্ছনলটি একটি পুরু আবরণীর দ্বারা আবৃত থাকে, একে পুচ্ছ আবরণী বলে। এই পুচ্ছ আবরণীটি সংকোচনশীল প্রকৃতির হয়।
ব্যাকটেরিয়াকে আক্রমণের সময় এটি সংকুচিত হয়ে পুচ্ছ নলটিকে ব্যাকটেরিয়ার দেহে প্রবেশ করায়। পুচ্ছ আবরণী ২৪টি বলয়ে মোট ১৪৪টি প্রোটিন অধঃএকক সর্পিলাকারে সজ্জিত ভাবে গঠিত হয়। পুচ্ছ নলের শীর্ষে লাইসোজাইম উৎসেচক থাকে, এটি পোষক কোশপ্রাচীর দ্রবীভূত হতে সাহায্য করে। এছাড়া পুচ্ছ নলের মধ্যে ফসফাটেজ উৎসেচক ও প্রায় ৪০ অণু মুক্ত ATP থাকে পুচ্ছ আবরণী সংকুচিত হওয়ার জন্য ATP এর দরকার হয়।
৪. পাদফলক : পুচ্ছের নিম্নে ষড়ভুজাকার পাদফলক থাকে এবং পাদফলকের ছয় কোণে ৬টি কীলকাকার স্পাইক অবস্থিত থাকে। পাদফলকের উপরের ছয় কোণে ১৩০nm দীর্ঘ ৬টি পুচ্ছতন্তু থাকে। এই কীলকের গায়ে ভাইরাসটি দাঁড়িয়ে থাকে এবং পোষক ব্যাকটেরিয়াকে শনাক্ত করতে পারে। পুচ্ছতন্ডুর সহযোগিতায় ফাজ ভাইরাসটি ব্যাকটেরিয়া কোশের পৃষ্ঠতলের সঙ্গে সংযুক্ত হয়।
৫. জেনেটিক পদার্থ : ফাজ ভাইরাসের প্রজননিক পদার্থ হল দ্বিতন্ত্রী DNA। T4 ফাজের দেহ ৫০% প্রোটিন আবরণী এবং ৫০% DNA দিয়ে গঠিত। DNA অণুর আনুমানিক ওজন ১৩০×১০৬ ডালটন যা ২০০,০০০টি বেস যুগ্ম দ্বারা গঠিত। T4 ফাজের DNA অণুটিতে ৬৫০টি জিন থাকে এবং A + T এবং G+ C-এর অনুপাত 1:12 হয়। DNA অণুটি ৫৩µm লম্বা ও অত্যন্ত কুণ্ডলীকৃত ভাবে মস্তকের মধ্যে থাকে। T4 ফাজের DNA অণুতে সাইটোসিনের পরিবর্তে ৫-হাইড্রক্সিমিথাইল সাইটোসিন অবস্থান করে।
পড়ুন : ভাইরাস কাকে বলে ?