সুপ্রিয় পাঠক বন্ধুরা, আজকের এই পর্বে আমরা আলোচনা করলাম ধাতু কাকে বলে এবং ধাতুর শ্রেণীবিভাগ সম্পর্কে।
ধাতু কাকে বলে :
ক্রিয়ার সবচেয়ে ছোট অংশ যেখানে ক্রিয়ার মূল অর্থ অর্থাৎ কাজটির অর্থের আভাস থাকে সেই অবিভাজ্য মূল অংশটিকেই বলে ধাতু বা ধাতুপ্রকৃতি/ক্রিয়াপ্রকৃতি। সাধারণত (√) এই চিহ্ন দিয়ে ধাতুকে নির্দেশ করা হয়। উদাহরণ হিসেবে- কর্, খা, বল্, খুঁজ প্রভৃতি।
এখানে উল্লেখ্য মৌলিক শব্দের অবিভাজ্য অংশটিকে বলা হয় প্রকৃতি। অর্থাৎ শব্দ থেকে প্রত্যয় ও বিভক্তিকে আলাদা করে দিলে যা থাকে তাই হল প্রকৃতি। এটি দুই ধরনের নামপ্রকৃতি ও ধাতুপ্রকৃতি। ধাতু বা ধাতুপ্রকৃতি সম্পর্কে আমরা আগেই ধারণা লাভ করেছি। আর নামপ্রকৃতি হল শব্দের যে মূল অংশ ভাব, গুণ, দ্রব্য বা জাতিকে বোঝায় (একে প্রাতিপাদিক বা সংজ্ঞাপ্রকৃতিও বলে)। উদাহরণ হিসেবে -মা, কাঠ, হাত প্রভৃতি।
পড়ুন : ধ্বনি কাকে বলে ?
ধাতুর সঙ্গে প্রত্যয় ও বিভক্তি যোগ করলে নতুন শব্দ কিংবা ক্রিয়াপদ গঠিত হয়। এই প্রত্যয়গুলিকে বলে ধাত্ববয়ব প্রত্যয় (উদাহরণ হিসাবে -কর্ + আ = করা) এবং বিভক্তিগুলিকে বলে ক্রিয়াবিভক্তি (উদাহরণ হিসেবে-কর্ + ইব = করিব)।
ধাতুর শ্রেণীবিভাগ :
উৎপত্তি ও প্রকৃতি হিসেবে ধাতুকে চারটি ভাগে বিভক্ত করা হয় যাথ- ১. মৌলিক (বা সিদ্ধ/একদল) ধাতু ২. সাধিত (বা বহুদল) ধাতু ৩. সংযোগমূলক ধাতু এবং ৪. যৌগিক ধাতু।
১. মৌলিক ধাতু কাকে বলে : যে সমস্ত ধাতুকে ভাঙা বা বিশ্লেষণ করা যায় না কিংবা ভাঙলেও কোনো প্রত্যয় পাওয়া যায় না সেই ধাতুকে বলা হয় মৌলিক ধাতু।
উদাহরণ হিসেবে- চল্, লিখ, বাধ, ধর্, কর্, বল্, ফেল্ প্রভৃতি। (মৌলিক ধাতুর পরে ধাতুবিভক্তি যোগ করলেই মৌলিক ক্রিয়া গঠিত হয়। উদাহরণ- কর্+ ইল = করিল।)
২. সাধিত ধাতু কাকে বলে : যে সকল ধাতুকে বিশ্লেষণ করলে এক বা অধিক প্রত্যয় পাওয়া যায় তাদেরকে বলা হয় সাধিত ধাতু। উদাহরণ- কর্ + আ = করা।
আবার গঠনগত দিক দিয়ে সাধিত ধাতু তিনপ্রকার- i. প্রযোজক ধাতু ii. নামধাতু এবং iii. ধ্বন্যাত্মক ধাতু।
i. প্রযোজক ধাতু : অপরজনকে দিয়ে কিছু করানো বোঝাতে মৌলিক ধাতুর পরে ‘আ’ প্রত্যয়যোগে যে সাধিত ধাতু গঠিত হয় তাকে বলে প্রযোজক ধাতু।
উদাহরণ- বস্ + আ = বসা, পড়+ আ = পড়া, কম্ + আ = কমা, হাস্ + আ = হাসা। [দেখ (ধাতু) + আ (প্রত্যয়) + ইব (ধাতুবিভক্তি) = দেখাইব > দেখাব] (প্রযোজক ধাতু) (প্রযোজক ক্রিয়া)
পড়ুন : স্বরধ্বনি কাকে বলে এবং বৈশিষ্ট্য ও শ্রেণীবিভাগ ?
ii. নামধাতু : বিশেষ্য কিংবা বিশেষণ অর্থাৎ নামপদের পরে ‘আ’ প্রত্যয় যোগ করে যে সাধিত ধাতুর উৎপত্তি হয় তাকে নামধাতু বলে।
উদাহরণ হিসেবে- বিষ (বিশেষ্য) + আ = বিষা (বিষানো অর্থে), ডর (বিশেষ্য) + আ = ডরা (ভয় করা অর্থে), রাঙা (বিশেষণ) + আ = রাঙা (রাঙানো অর্থে), বাঁকা (বিশেষণ) + আ = বাঁকা (বাঁকানো অর্থে)। [বিষা (নামধাতু) + ইল (ধাতুবিভক্তি) = বিষাইল > বিষাল-নামধাতুজ ক্রিয়া]
iii. ধ্বন্যাত্মক ধাতু : যে সব অনুকার অব্যয় বা ধ্বন্যাত্মক অব্যয় ধাতু ভেবে ব্যবহার করা হয় হয় সেইসব সাধিত ধাতুকে বলে ধ্বন্যাত্মক ধাতু।
উদাহরণ হিসেবে- কনকন (ধ্বন্যাত্মক অব্যয়) + আ = কনকনা (প্রবল ঠান্ডা অর্থে), বকবক (ধ্বন্যাত্মক অব্যয়) + আ = বকবকা (বাচালতা অর্থে), [ঠকঠকা (ধ্বন্যাত্মক ধাতুঋ + ইল (ধাতুবিভক্তি) = ঠকঠকাইল > ঠকঠকাল ধ্বন্যাত্মক ক্রিয়া]
৩. সংযোগমূলক ধাতু কাকে বলে : বিশেষ্য, বিশেষণ এবং ধ্বন্যাত্মক অব্যয়ের সঙ্গে কর্, দি, খা, পা, হ, কাট্ ইত্যাদি কতগুলি মৌলিক ধাতুর সংযোগে যে ধাতু তৈরি হয় তাকে সংযোগমূলক ধাতু বলে।
উদাহরণ হিসেবে- ‘কর্’ ধাতু যোগে মানা কর্, টোটো কর, ঝটপট কর্। ‘দি’ ধাতু যোগে ডুব দি, লাফ দি, ছুট দি। ‘খা’ ধাতু যোগে: মাথা খা, খাবি খা, নুন খা। ‘পা’ ধাতু যোগে লজ্জা পা, ঘুম পা, ব্যথা পা। ‘হ’ ধাতু যোগে মানুষ হ, শামিল হ, রাজি হ। ‘কাট্’ ধাতু যোগে: সাঁতার কাট্, সুতো কাট্, জিভ কাট্। {ঝটপট কর্ (সংযোগমূলক ধাতু) + ইতে (ধাতুবিভক্তি) + লাগল ঝটপট করতে লাগল সংযোগমূলক ক্রিয়া}
৪. যৌগিক ধাতু কাকে বলে : ‘ইয়া’ এবং ‘ইতে’ বিভক্তিযুক্ত অসমাপিকা ক্রিয়া যখন সমাপিকা ক্রিয়ার পূর্বে বসে উভয়ে মিলে একটি ধাতুর উৎপত্তি করে তখন তাকে বলা হয় যৌগিক ধাতু। এক্ষেত্রে সাধারণত সমাপিকা ক্রিয়া হিসেবে রাখ, পা, উঠ, ফেল্, দি, নে, থাক্, পড়ু ইত্যাদি ধাতু ব্যবহৃত হয়।
পড়ুন : ব্যঞ্জনধ্বনি কাকে বলে এবং বৈশিষ্ট্য ও শ্রেণীবিভাগ ?
উদাহরণ হিসেবে- ধরে রাখ, বসে থাক্, বলে ফেল্, শুনিয়ে দি প্রভৃতি। [কেটে (অসমাপিকা ক্রিয়া) + ফেল্ (সমাপিকা) + ইল (ল)= কেটে ফেলল যৌগিক ক্রিয়া]