সুপ্রিয় বন্ধুরা আজকের এই পর্বে আপ আলোচনা করলাম ব্রাহ্মণ মানব মহিমার কবিতা সম্পর্কে চলুন দেখে নেওয়া যাক বিস্তারিত আলোচনাটি।
ব্রাহ্মণ মানব মহিমার কবিতা সম্পর্কে আলোচনা করো :
ই ফাল্গুন ১৩০১ শিলাইদহে লেখা হয়েছে “ব্রাহ্মণ”। গল্পগুচ্ছের বিখ্যাত গল্পগুলি লেখা চলছিল এই পর্বে। কবিতাতেও রয়েছে গল্পের কিছুটা আভাস। ‘ব্রাহ্মণ ‘পুরাতনভৃত্য’, ‘দুই বিঘা জমি’-সমালোচকরা এগুলিকে বলেছেন “Story in Verse” ” কাহিনিটি নেওয়া হয়েছে ছান্দোগ্যোপনিষৎ এর চতুর্থ খণ্ডের চতুর্থ অধ্যায় থেকে। সেক্ষেত্রে কাহিনিটি এরকম তরুণ কিশোর সত্যকাম একদিন তার মাতা জবালাকে বলল যে, ব্রহ্মচর্য অবলম্বন করবার জন্য সে গুরুগৃহে যেতে চায়। এজন্য তার পিতৃপরিচয় গোত্র পরিচয় জানা প্রয়োজন।
কিন্তু মাতা জবালা সত্যকামকে গোত্র পরিচয় জানাতে পারেননি। কারণ যৌবনে বহু পরিচারিণী থাকা কালে সত্যকামের জন্ম হয়েছে। এরপর সত্যকাম ঋষি গৌতমের কাছে এসে জানায় তার ব্রহ্মচর্য লাভের বাসনার কথা এবং সেই সঙ্গে সূর্যসম সেই ঋষির প্রশ্নের উত্তরে জানায় তার গোত্রহীনতার কথাও। তখন ঋষি গৌতম ঘোষণা দেন যে, এমন সত্যবাদিতা যার মধ্যে আছে তিনিই প্রকৃত ব্রাহ্মণ। এরপর সত্যকাম গৌতম ঋষির কাছে ব্রহ্মচর্য দীক্ষিত হয়।
রবীন্দ্রনাথ ঠাউ এই পর্যন্ত কাহিনিটিকে গ্রহণ করেছেন। পরের কাহিনি সত্যকামের ব্রহ্মচর্যের জীবন যে কত কঠিন পথ অতিক্রম করার কাহিনি তা জানা যায় যখন সেই ঋষির চারশত কৃশ ও দুর্বল গরু নিয়ে বহু বছর পরে সেগুলিকে সহস্র সংখ্যায় পরিণত ক’রে গুরুর কাছে সে ফিরে এসেছিল। একালের কবি শঙ্খ ঘোষও তাঁর “জাবাল সত্যকাম” কবিতার মুখবন্ধে গ্রহণ করেছেন কাহিনিটি। তাঁর সত্যকাম ঋষি গৌতমকে উদ্দেশ্যে করে বলেছেন।
পড়ুন : সিন্ধুপারে রূপকথা আর অধিবাস্তব জগতে জীবনদেবতার সঙ্গ
“এখন আজানু এই উদাসীন মাঠে মাঠে আমার সকাল
তুমি দিয়েছিলে ভার আমি তাই নির্জন রাখাল।”
রবীন্দ্রনাথ উপনিষদকে বলতেন “ভারতবর্ষের ব্রহ্মজ্ঞানের বনস্পতি”। ছান্দোগ্য উপনিষদ এর যে পাঠটি তিনি গ্রহণ করেছিলেন সেটি হল-
সত্যকামোহ জাবালো জবালাং মাতরমামন্ত্রয়াঞ্চক্রে
ব্রহ্মচর্যং ভবতি বিবৎস্যামি কিং হনূব্রহন্বহমস্মীতি।
সা হৈনমুবাচ নাহমেতদ বেদ তাত যগোত্রত্বমসি
বহুহং চরন্তী পরিচারিনী যৌবনে ত্বামলভে
সাহযেতন্ন বেদ মগোত্র স্মসি
জবালা তু নামাহমস্মি সত্যকামো নাম ত্বমসি
স সত্যকাম এব জবালো ব্রুবীথা ইতি।
স হ হারিদ্রুমতং গৌতমমেত্যোবাচ
ব্রহ্মহ্মচর্যং ভগবতি বৎস্যাম্যু পেয়াং ভগবন্তমিতি।
তং হোবাচ কিং গোত্রে নু সোম্যাসীতি।
সং হোবাচ নাহমেতদ্ বেদ ভো যদ, গোত্রহ হমিস্মি
অপৃচ্ছং মাতরং
সা মা প্রত্যব্রবীদ্ বৃহহং চরন্তী পরিচারিনী যৌবনে ত্বমলভে সাহমেতন্ন বেদ যদ্ গোত্রত্বমসি
জবালা তু নামহস্মি সত্যকামো নাম ত্বমসতি সোহহং সত্যকামো জাবালোহস্মি ভো ইতি
তং হোবাচ নৈতদব্রাহ্মণো বিবক্রুমর্হতি
সমিধং সোম্যাহরোপ ত্বা নেষ্যে
ন সত্যাদপা ইতি।
কাহিনি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, এ কবিতার রবীন্দ্রনাথ পুরাণকে প্রায় অবিকল ভাবে গ্রহণ করেছেন। “বিদায় অভিশাপ” এর অন্তিম অংশে কচের অভিশাপ পরিনত হয়েছিল আশীর্বাদে। কিন্তু এখানে কোনো মৌলিক ব্যতিক্রম নেই। তপোবনের দৃশ্য কল্পনাতে রয়েছে
ক্লাসিক সৌন্দর্যবোধ।
“বিহঙ্গ কাকলিগান
মধুপ-গুঞ্জনগীতি, জলকলতান,
তারি সাথে উঠিতেছে গম্ভীর মধুর
বিচিত্র তরুণ কণ্ঠে সম্মিলিত সুর
শান্ত সামগীতি।
” নতুনত্ব আছে গৌণ কয়েকটি ক্ষেত্রে। যথা-
১. সত্যকাম ঋষি গৌতমের নিকটে শিষ্যত্ব গ্রহণের জন্য দিনের কোন্ সময়টি বেছে নিয়েছিল পুরাণে একেবারে তা স্পষ্ট নয়। রবীন্দ্রনাথ এক প্রসন্ন নবীন প্রভাতকে সেই কাঙ্খিত সময় রূপে চিহ্নিত করেছেন।
2. পুরাণে রয়েছে সত্যকাম তার মাতার কাছ থেকে আত্মপরিচয় জেনেই গিয়েছিল ঋষি গৌতমের কাছে। রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন এক সন্ধ্যার সময় প্রথম সত্যকাম গিয়েছিল গৌতমের কাছে- “ভগবান, ব্রহ্মবিদ্যাশিক্ষা অভিলাষী আসিয়াছি দীক্ষাতরে কুশক্ষেত্রবাসী সত্যকাম নাম মোর।”
উত্তরে গৌতম জানতে চেয়েছিলেন সত্যকামের গোত্র ও পরিচয়। কারণ “শুধু ব্রাহ্মণের আছে অধিকার/ব্রহ্মবিদ্যালাভে”। অত:পর জবালার কাছে আপন পরিচয় জেনে পরদিন প্রভাতে সত্যকাম আবার এসেছিল ঋষির আশ্রমে।
পড়ুন : চিত্রা নামকরণে ছবির ইশারা আলোচনা করো
পূর্বদিনের সন্ধ্যা এবং পরদিনের প্রভাত এই দুটি সময়কাল ব্যবহারের অবশ্যই স্বপ্ল ব্যঞ্জনা আছে। সন্ধ্যার আলোকহীনতা সত্যকামের পিতৃ পরিচয়ের অন্ধকার দিকটির ইঙ্গিত দেয়। অপরদিকে পরদিন প্রভাতে সত্যের আলোকে উপনীত হয়েছে সত্যকাম। ঋষি গৌতম তাকে সমিধ আরহণ করতে বলেছেন। ব্রহ্মবিদ্যা লাভের শুভক্ষণ সমাগত।
রামায়ণ, মহাভারত, জাতকমালা, উপনিষদ, কালিদাস এমনি অজস্র প্রাচীন সাহিত্য থেকে উপাদান নিয়ে তাকে নতুনভাবে রষ দিয়েছেন রবীন্দ্রনাথ। কখনও তা মনস্তাত্ত্বিক দিগন্ত উন্মোচিত করেছে আবার কখনও তা মনুষ্যত্ববোধের নতুন ব্যাখ্যা হয়ে দেখা দিয়েছে। সাহিত্যের উদ্দেশ্যহীনতায় বিশ্বাসী হলেও এসব ক্ষেত্রে একেবারেই সেরকম কোনো উদ্দেশ্য ছিল না বলা যায় না।
যেমন এই ব্রাহ্মণ কবিতাতেই চেয়েছেন প্রাচীন ভারতবর্ষের ব্রাহ্মণদের উন্নততর আদর্শ আমাদের কাছে তুলে ধরতে। নৈবেদ্য এর একটি কবিতায় বিশ্বপিতার কাছে প্রার্থনা করেছিলেন ভারতেরে সেই স্বর্গে করো জাগরিত যেখানে মানুষের চিত্ত ভয়শূন্য জ্ঞানযুক্ত সেখানে বিচারবোধকে আচ্ছন্ন করা হয়নি। ব্রাহ্মণ কবিতাতেও এমন একটি কামনার বাণী প্রচ্ছন্ন নয়।
এই পরিপ্রেক্ষিতে বঙ্গদর্শন পত্রিকায় প্রকাশিত রবীন্দ্রনাথের ব্রাহ্মণ নামক প্রবন্ধটিকে অবশ্যই স্মরণ করতে হবে। কোনো মহারাষ্ট্রীয় ব্রাহ্মণকে তার ইংরেজ প্রভু পাদুকাঘাত করার বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ায়। ‘ব্রাহ্মণ’ প্রবন্ধ সেই উপলক্ষে লেখা।
কিন্তু সাধারণত উদ্দেশ্য ছিল ভারতবর্ষীয় ব্রাহ্মণ আদর্শকে পুন প্রতিষ্ঠিত করার সংকল্প। রবীন্দ্রনাথ বিশ্বাস করতেন যে, সরলতা, বিশুদ্ধতা, নির্লোভ মানসিকতা ও আদর্শবোধকে আশ্রয় করে ব্রাহ্মণরা একদা সমাজতন্ত্রের নেতৃত্ব দিতেন প্রাচীন ভারতবর্ষে সেই জায়গা থেকেই তাঁদের বিচ্যুতি ঘটেছে। এই কারণেই আজ নানা ক্ষেত্রে তাঁদের সম্মানহীনতা। কিন্তু আমাদের সর্বদা মনে রাখতে হবে, ব্রাহ্মণ বলতে রবীন্দ্রনাথ আমাদের বর্ণাশ্রয়ী সমাজের বিশেষ হিন্দু শ্রেণিকে বোঝাতে চাননি। মানুষের মহিমা মনয্যত্বের উচ্চতর আদর্শ যাঁর মধ্যে প্রতিফলিত হয় তারাই হলেন ব্রাহ্মণ।
এই বোধ থেকেই এ কবিতায় ক্রমশ ব্রাহ্মণ হয়ে উঠেছে সত্যকাম। জন্ম পরিচয় একটা আকস্মিক ঘটনা মাত্র। মানুষের প্রকৃত পরিচয় তার সততায় এবং সত্যবাদিতায়। তাই ঋষি গৌতম শেষ পর্যন্ত আসন ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়েছেন।
সত্যকাম নামটির সার্থকতাও উঠে এসেছে এই বাক্যবন্ধে। তার নামেও অনায়াসে এই কবিতার নাম হতে পারতো। তবু মনে হয় ঋষি গৌতমকেই ব্রাহ্মণের আদর্শ রূপে দেখাতে চেয়েছেন রবীন্দ্রনাথ।
পুরাণের ঋষি গৌতম হল মানুষের আচার, রীতি নীতি বিষয়ক সংহিতার রচনাকার। এঁরই স্ত্রী অহল্যা যিনি ছদ্মবেশী ইন্দ্রের সঙ্গে সংগমের অপরাধে গৌতম কর্তৃক অভিশপ্ত হয়ে পাষাণী রূপ ধারণ করেছিলেন। পরবর্তীকালে রামরূপী বিষ্ণুর পাদস্পর্শে শাপমুক্ত হয়েছিলেন।
ব্রাহ্মণ কবিতায় মাত্র দুটি জায়গার নাম ব্যবহার করা হয়েছে। ঋষি গৌতমের তপোবনকে স্থাপন করা হয়েছে সরস্বতী তীরে। অন্যদিকে সত্যকামের বাসস্থান নদীর অপর পারে কুশক্ষেত্র নামক গ্রামে। দুটিই ছিল কবি কল্পনা তবে ঐতিহাসিক সম্ভাবনা রয়ে গেছে অনেকগুলি জায়গায়।
পুরাকালে লোকালয়ের সাথে জনপদগুলির যে একটা নিত্য যোগাযোগ ছিল তার প্রমাণ পাওয়া যায় সত্যকাম পূর্ব সন্ধ্যায় আশ্রম থেকে একা অন্ধকারে নিজের গ্রামে ফিরে গেছে। এবং পরদিন প্রাত:কালেই আবার আশ্রমে ফিরে এসেছে। তাদের কুটির ছিল গ্রামপ্রান্তে। হয়তো জবালার বহু পরিচর্যা বৃত্তির কারণে গ্রামসমাজে তাদের ব্রাত্য হতে হয়েছিল।
সেকালের আশ্রমিক বালকদের দিনযাত্রার চিত্রও কয়েকটি রেখায় ফুটিয়ে তুলেছেন রবীন্দ্রনাথ। যেমন, অরণ্য থেকে সমিধ সংগ্রহ করতে হোত তাদের। তপোবনে গোচারণ এবং গোপালন ছিল তাদের আবশ্যিক কর্তব্য। প্রভাত এবং সন্ধ্যায় দুবার স্নান করতে হোত তাদের। কখনো বটের ছায়ায় আবার কখনো ঋষির কুটির প্রাঙ্গনেই চলতো তাদের বিদ্যাচর্চার পর্ব। সঙ্গীত চর্চাও হতো এখানে। বিদ্যার্থী বালকের স্বভাবচাপল্য এবং প্রাকৃত মানসিকতা রবীন্দ্রনাথ বাস্তবোচিত দক্ষতায় ফুটিয়ে তুলেছেন সত্যকামের প্রকৃত পরিচয় উদঘাটিত হওয়ার পর তাদের চাঞ্চল্য প্রকাশের দৃশ্যের মধ্য দিয়ে।
চিত্রা কাব্যগ্রন্থে সমিল প্রবহমান পয়ার ছন্দে লেখা এ কবিতা যখন প্রথম প্রকাশিত হয় তখন স্তবকের সংখ্যা ছিল দশটি। পরে সঞ্চয়িতার পাঠে কয়েকটি স্তবক একত্র করে রবীন্দ্রনাথ একে দুটি স্তবকে বিন্যস্ত করেন।
গৌতম আর সত্যকাম দুটি চরিত্রের মধ্যে আপাতদৃষ্টিতে মনে হয় সত্যকামকে সম্মকভাগে রেখেই কবিতাটির ব্রাহ্মণ নামকরণ। ঋষি গৌতম সত্যনিষ্ঠার গুণে এবং মানবিকতায় ব্রাহ্মণত্বে স্থিত রয়েছেন। প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায় এরই পাশাপাশি মহাভারত থেকে তুলে এনেছেন ব্যাসদেব বিদুরের চরিত্র যাদের পিতৃপরিচয়ের গৌরব নেই, অথচ তাঁরা দ্বিজোত্তম, প্রণম্য।
পাশাপাশি মনে রাখা দরকার ঋষি গৌতম এবং প্রবল মাতৃত্বের অধিকারী জবালার কথা। সত্যকামের সত্যবাদিতা আমাদের গৌরবজনক মনে হয় কিন্তু আমরা ভুলে যাই মাতা জবালার সত্যভাষণকে। সত্যকামের সত্যনিষ্ঠার বীজ লুকিয়ে আছে তার মাতার চরিত্রে। পুত্রের কাছে তার জন্মের সত্যপরিচয় দিতে তিনি দ্বিধা করেননি।
পড়ুন : পথের পাঁচালী উপন্যাসের সর্বজয়া চরিত্র
রবীন্দ্রজীবনীকার প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায় বিষয়টির দিকে আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন- রবীন্দ্রনাথ এই কবিতাটির মধ্যে মাতৃত্বের যে অপরাজেয় অধিকার প্রতিষ্ঠিত করিয়া বিপ্লববাদকে প্রচণ্ড সমর্থন করিয়াছিলেন। তার মর্ম ধর্মধ্বজীরা হৃদয়ঙ্গম করিতে না পারিয়া এই সুন্দর দৃষ্টিতে পঙ্কতিলক লেপন করিতে লাগিলেন। তথাকথিত ব্রাহ্মণরা গোত্রহীন বালককে ব্রহ্মবিদ্যা দান করবার উদারতা মেনে নিতে পারেনি।
তেমনি বহুবল্লভা নারীর মাতৃত্বের অধিকার স্বীকার করতেও কুণ্ঠিত ছিল। মাতৃপরিচয়ে সন্তানের পরিচয় দেবার দাবী উঠেছে অতি সম্প্রতি নারীবাদীদের মধ্য থেকে। সম্ভবত জবালাই প্রথম ভারতীয় নারী, যিনি বিদ্যায়তনে তাঁর সন্তানকে কেবল মাতৃপরিচয় দিয়েই প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছিলেন।
কবিতায় গুরু গৌতমের অন্তিম উক্তিটি যেমন একদিকে সমস্ত কবিতার নির্যাস, তেমনি আমাদের পথভ্রষ্টও করে অপরদিক থেকে, তুমি অব্রাহ্মণ নও, তুমি দ্বিজ শ্রেষ্ঠ, তুমি সত্যবংশের সন্তান ঋষির এই প্রশস্তিগুলি সত্যকামের ব্রাহ্মণত্ব প্রতিপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে। কিন্তু আড়ালে থেকে গেছেন স্বয়ং গৌতম ঋষি।
তিনিও তো দ্বিজোত্তম। তিনিও তো মানবসত্যের ধ্বজা তুলে ধরেছেন। ব্রাহ্মণত্বের মহিমা তিনিই তো তুলে ধরলেন সত্যকামের বিদ্যার্থী সত্তাটিকে স্বীকৃতি দিয়ে প্রতিজ্ঞাকে মূল্য দিয়ে। তাই কবিতার ব্রাহ্মণ নামকরণটি মনে হয় সত্যকামের সামনে রেখে করা হয়নি রবীন্দ্রনাথ নিশ্চয়ই ঋষি গৌতমকেও সমানভাবে মনে রেখেছিলেন।
এ কবিতার বড়ো সম্পদ চিত্রকল্পগুলি। আশ্রমের দৃশ্যপট সন্ধ্যার আকাশ, বন থেকে যজ্ঞকাষ্ঠ মাথায় নিয়ে বিদ্যার্থীদের আশ্রম কুটীরে ফেরা, হোমাগ্নির আলোকে গুরু গৌতমকে ঘিরে তাদের বিদ্যাচর্চা, সন্ধ্যার বনপথ দিয়ে সত্যকামের ঘরে ফিরে যাওয়া, গৃহে সন্ধ্যাদীপ জ্বালিয়ে জবালার প্রতিক্ষা, প্রাত:কালের আশ্রমে ভেজা জটা নিয়ে আশ্রমবালকদের বটবৃক্ষতলে বিদ্যাধ্যায়ন ইত্যাদি ছবিগুলি এক একটি স্বভাবোক্তি অলংকাল সৃষ্টি করেছে সমস্ত কবিতায়।