ফুল কাকে বলে – what is Flowers : সুপ্রিয় বন্ধুরা আমাদের এই পর্বটিতে আলোচনার বিষয় হল ফুল কাকে বলে ? ফুলের বৈশিষ্ট্য ও প্রকারভেদ ? ও বিভিন্ন ফুলের বিজ্ঞানসম্মত নাম সম্পর্কে।
◆ ফুল কাকে বলে :
সপুষ্পক উদ্ভিদের বিটপের আকৃতি পরিবর্তিত হয়ে পুষ্পমুকুল সৃষ্টি হয়। যা প্রস্ফুটিত হয়ে ফুলে পরিণত হয়। ফুল নানা বর্ণ ও গন্ধযুক্ত হয়। ফুল উদ্ভিদের জনন ও বংশবিস্তারে সাহায্য করে বলে ফুলকে জনন অঙ্গ বলে। ফুল থেকে ফল ও বীজ হয় এবং বীজ থেকেই নতুন উদ্ভিদের সৃষ্টি হয়।
◆ ফুল কাকে বলে :
জননে সাহায্যকারী পরিবর্তিত ও সীমিত বৃদ্ধিসম্পন্ন বিটপ অংশকে ফুল বলে।
◆ ফুলের বৈশিষ্ট্য :
ফুলের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য গুলি হল-
i. ফুল একটি পরিবর্তিত বিটপ।
ii. ফুল উদ্ভিদের একটি ক্ষণস্থায়ী অঙ্গ।
iii. কান্ডশীর্ষ, পত্রকক্ষ বা মঞ্জুরিপত্রের কক্ষ থেকে ফুল সৃষ্টি হয়।
iv. এটি বিচিত্র বর্ণ, আকার ও গন্ধযুক্ত হয়।
v. ফুল উদ্ভিদের বংশবিস্তারে সাহায্য করে।
vi. ফুল পুষ্পপত্র ধারণ করে।
vii. ফুল থেকে ফল ও বীজের সৃষ্টি হয়।
◆ ফুলের প্রকারভেদ :
ফুলের বিভিন্ন স্তবকগুলির গঠন ও আকৃতির ওপর নির্ভর করে ফুলকে দু-ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথা- 1. সুষম ফুল ও 2. বিষম ফুল
1. সুষম ফুল কাকে বলে :
যে ফুলের প্রতিটি স্তবকের অংশগুলি আকৃতিগতভাবে পরস্পর সমান, তাকে সুষম বা সমাঙ্গ ফুল বলে। উদাহরণ – জবা, ধুতরো ইত্যাদি ফুল।
2. বিষম ফুল কাকে বলে :
যে ফুলের কোনো না কোনো স্তবকের অংশগুলি আকৃতিগতভাবে অসমান, তাকে বিষম বা অসমাঙ্গ ফুল বলে। উদাহরণ – মটর, অপরাজিতা, বক ইত্যাদি ফুল।
◆ প্রতিসাম্যের ভিত্তিতে ফুলের প্রকারভেদ :
প্রতিসাম্যের ভিত্তিতে ফুলকে নিম্নলিখিত ভাগে ভাগ করা যায়-
i. বহুপ্রতিসম : কোনো ফুলের কেন্দ্রবিন্দুকে নির্দিষ্ট রেখে যদি সেই ফুলকে লম্বালম্বিভাবে কেন্দ্র বরাবর দুটি সমান অংশে বহুবার ভাগ করা যায়, তাকে বহুপ্রতিসম ফুল বলে। উদাহরণ – জবা, ধুতরো, বেগুন, সরষে ইত্যাদি ফুল।
ii. একপ্রতিসম : যে ফুল তার নিজের কেন্দ্র বরাবর লম্বালম্বিভাবে কেবলমাত্র একবার দুটি সমান অংশে বিভক্ত করা যায় তখন একে একপ্রতিসম ফুল বলে। উদাহরণ স্বরূপ – মটর, বক, অপরাজিতা,শিম প্রভৃতি ফুল।
iii. অপ্রতিসম : কোনো ফুলকে যদি তার কেন্দ্র বরাবর কখনোই দুটি সমান ভাগে ভাগ করা না যায়, তখন তাকে অপ্রতিসম ফুল বলে।উদাহরণ – অর্কিড, সর্বজয়া ইত্যাদি ফুল।
◆ কয়েকটি পরিচিত ফুলের বিজ্ঞানসম্মত নাম :
1. জবা ➡️ Hibiscus rosa-sinensis
2. গোলাপ ➡️ Rosa centifolia
3. গন্ধরাজ ➡️ Gardenia jasminoides
4. অপরাজিতা ➡️ Clitoria ternatea
5. চাঁপা ➡️ Michelia champaca
6. টগর ➡️ Ervatamia divaricata
7. জুই ➡️ Jasminum auriculatum
8. সন্ধ্যামালতী ➡️ Mirabilis jalapa
9. জিনিয়া ➡️ Zinnia elegans
10. পদ্ম ➡️ Nelumbo nucifera
11. গাঁদা ➡️ Tagetes patula
12. চন্দ্রমল্লিকা ➡️ Chrysanthemum coronarium
13. নয়নতারা ➡️ Catharanthus roseus
14. গুলমোহর ➡️ Delonix regia
15. ডালিয়া ➡️ Dahlia pinnata
16. কাঞ্চন ➡️ Bauhinia purpurea
17. রক্তকরবী ➡️ Nerium indicum
18. উলটচণ্ডাল ➡️ Gloriosa superba
19. শালুক ➡️ Nymphaea stellata
20. কৃষ্ণচূড়া ➡️ Caesalpinia pulcherima
21. সূর্যমুখী ➡️ Helianthus annuus
22. বকফুল ➡️ Sesbania grandifolia
23. তরুলতা ➡️ Ipomoea quamoclit
24. রজনিগন্ধা ➡️ Polianthes tuberosa
25. বেলিফুল ➡️ Jasminum sambac
26. বকুল ➡️ Mimusops elengi
27. ধুতুরা ➡️ Datura metel
◆ ফুল সম্পর্কে কয়েকটি বিশেষ তথ্য :
● ফুলের বৃদ্ধি সীমিত এবং ফুল একটি পরিবর্তিত বিটপ।
● সম্পূর্ণ ফুলের চারটি স্তবক থাকে, যেমন- বৃতি, দলমণ্ডল, পুংস্তবক ও স্ত্রীস্তবক।
● ফুলের পুংস্তবক ও স্ত্রীস্তবক হল জনন স্তবক বা অপরিহার্য স্তবক এবং বৃতি ও দলমণ্ডল হল সাহায্যকারী স্তবক বা আনুষঙ্গিক স্তবক। চারটি স্তবক থাকলে তাকে সম্পূর্ণ পুষ্প এবং যে-কোনো একটি স্তবক না থাকলে তাকে অসম্পূর্ণ পুষ্প বলে।
● বৃতি ফলের সঙ্গে যুক্ত থাকলে তাকে স্থায়ী বৃতি বলে। যেমন- বেগুন, লঙ্কা ইত্যাদি; বৃতি যদি বড়ো হয়ে ফলককে আবৃত করে ফেলে তখন তাকে বর্ধনশীল বৃতি বলে। যেমন- চালতা।
● ফুলে সাহায্যকারী স্তবক (বৃত্তি ও দলমণ্ডল) না থাকলে তাকে নগ্নপুষ্প বলে, অপরপক্ষে ফুলে অপরিহার্য স্তবক (পুংস্তবক ও স্ত্রীস্তবক) না থাকলে তাকে বন্ধ্যা ফুল বলে।
● যখন পুরুষ ফুল ও স্ত্রী ফুল ভিন্ন গাছে জন্মায় তখন তাকে ভিন্নবাসী উদ্ভিদ বলে। যেমন- তাল, নারকেল, পেঁপে ইত্যাদি। যখন একই গাছে পুরুষ ফুল ও স্ত্রী ফুল জন্মায় তখন তাকে সহবাসী উদ্ভিদ বলে। যেমন- লাউ, কুমড়ো ইত্যাদি। যখন একই গাছে পুরুষ ফুল, স্ত্রী ফুল ও উভলিঙ্গ ফুল জন্মায় তখন তাকে মিশ্রবাসী উদ্ভিদ বলে। যেমন-আম গাছ।
● অনেক সময় ফুল উদ্ভিদের মাটির নীচের অংশ থেকেও জন্মায়। যেমন- কাঁঠাল।
● নিষেকের পরে ফুলের গর্ভাশয় ফল ও ডিম্বক বীজ সৃষ্টি করে।
আরও পড়ুন : |