◆ ট্যাক্সোনমির উপাদান :
ট্যাট্যাক্সোনমির মূল বিষয়বস্তু গুলি হল-শনাক্তকরণ, নামকরণ, শ্রেণিবিন্যাস ও প্রামাণ্য দলিলগুলির সংরক্ষণ।
১. শনাক্তকরণ : বিশেষ বৈশিষ্ট্যের দ্বারা কোনো জীবকে অন্যান্য জীবদের থেকে আলাদা করে চিনে নেওয়ার পদ্ধতিকে বলে শনাক্তকরণ বা আইডেন্টিফিকেশন।
পৃথিবীতে অগণিত জীবের বসবাস। বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে তাদের শনাক্ত করা হয়। বিশেষ বৈশিষ্ট্যের দ্বারা জীবদের পৃথক করার পদ্ধতিই হল শনাক্তকরণ। কোনো উদ্ভিদ বা প্রাণীর সঠিক বর্ণনা করা এবং বর্ণনার ভিত্তিতে জীবটিকে শনাক্ত করা ট্যাক্সোনমির প্রাথমিক কাজ।
শনাক্তকরণ সাধারণত করা হয় একটি নির্দিষ্ট উদ্ভিদ নমুনাকে আগে থেকে শনাক্ত করা নমুনার সাথে তুলনা করে এবং তার বর্ণনা ও ছবি মিলিয়ে। অনেকক্ষেত্রে, আগে থেকে শনাক্ত করা নমুনার সাথে শনাক্তকরণ করা হবে এমন উদ্ভিদ নমুনার মিল নাও থাকতে পারে-সেক্ষেত্রে নতুন উদ্ভিদ নমুনাটি বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে নতুন কোনো প্রজাতি বা গণ হতে পারে।
২. নামকরণ : গোষ্ঠীভুক্ত প্রত্যেক জীবকে পৃথক পৃথক নাম আরোপ করে আলাদা করে নেওয়ার পদ্ধতিকে নামকরণ বলে।
জীব চেনার পর অর্থাৎ শনাক্তকরণের পর তার নামকরণ করা হয়। উদ্ভিদ ও প্রাণীর সাধারণ নাম ও বিজ্ঞানসম্মত নাম প্রচলিত আছে। বিজ্ঞানী ক্যারোলাস লিনিয়াস 1753 খ্রিস্টাব্দে জীবের দ্বিপদ নামকরণ প্রচলন করেন। এরকম নাম গণ ও প্রজাতি নামক দুটি পদ নিয়ে গঠিত। যেমন-মটর গাছের দ্বিপদ নাম Pisum sativum (Pisum গণ, sativum প্রজাতি)। বাঘের দ্বিপদ নাম Panthera tigris (Panthera গণ, tigris প্রজাতি)।
৩. শ্রেণিবিন্যাস : জীবের আকৃতিগত ও প্রকৃতিগত বিভিন্ন ধরনের বৈশিষ্ট্যাবলির পারস্পরিক সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্যের ওপর ভিত্তি করে তাদের বিভিন্ন বিভাগ, শ্রেণি, বর্গ, গোত্র, গণ, প্রজাতি প্রভৃতি গ্রুপ-এ স্থাপন করার পদ্ধতিকে শ্রেণিবিন্যাস বলে। সংক্ষেপে, সম্পর্কবদ্ধ জীবকে গোষ্ঠীভুক্তকরণের পদ্ধতিকে শ্রেণিবিন্যাস বলে।
ট্যাক্সোনমির একটি বিশেষ প্রতিপাদ্য বিষয় হল উদ্ভিদ ও প্রাণীর শ্রেণিবিন্যাস। জীবের নামকরণ ও শনাক্তকরণের পর তাদের বিভিন্ন গোষ্ঠীতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। জীবদের বিভিন্ন গোষ্ঠীতে গোষ্ঠীভুক্ত করার পদ্ধতিই হল শ্রেণিবিন্যাস।
◆ ট্যাক্সোনমির গুরুত্ব :
ট্যাক্সোনমির গুরুত্ব গুলি হল-
a. বৈচিত্র্যময় জীবজগতে বর্তমানে বিভিন্ন প্রকার জীবদের সম্পর্কে জ্ঞান আহরণ সহজ হয়। বিভিন্ন গোষ্ঠীভুক্ত জীবদের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক নির্ণয় করা যায়।
b. ট্যাক্সোনমির জ্ঞান থেকে জীবের পূর্বপুরুষ যে অনুন্নত ছিল সেই তথ্য এবং এই বিবর্তনের ধারা সম্পর্কে জানা যায়।
c. অগণিত জীবের মধ্যে কোনো বিশেষ জীবকে শনাক্ত করা যায়।
d. নতুন আবিষ্কৃত কোনো জীব বা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ কোনো জীবকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়।
e. অর্থনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ ও ভেষজ উদ্ভিদের সঙ্গে সিস্টেমেটিক্স ঘনিষ্ঠ সম্পর্কযুক্ত। প্রকৃতপক্ষে ভেষজবিদ্যার সূত্রপাত বিন্যাসবিধি বিশারদগণের কাজের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে।
f. ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক, প্রোটোজোয়া, কৃমি প্রভৃতি জীব মানুষ, প্রাণী ও অর্থকরী উদ্ভিদের রোগ ঘটায়। ফসল ও গুদামজাত শস্যের ক্ষতিকারক কীটপতঙ্গ, আগাছা প্রভৃতির শনাক্তকরণ; স্বভাব, বাসস্থান সম্বন্ধে জ্ঞান তাদের নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
g. কোনো কোনো উদ্ভিদ ও প্রাণী প্রজাতি বিশেষ ধরনের মাটি ও পরিবেশ পছন্দ করে। কোনো অঞ্চলে বিশেষ গোষ্ঠীভুক্ত উদ্ভিদ ও প্রাণী প্রজাতির যে বসতি গড়ে ওঠে তা থেকে পরিবেশের উপাদান সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।
h. সংকরায়ণ পরীক্ষায় জনিতা নির্বাচনের ক্ষেত্রে ট্যাক্সোনমির জ্ঞান থাকা আবশ্যক।
i. সিস্টেমেটিক্স বাস্তব্যবিদ্যা, শারীরস্থান, ভূণতত্ত্ববিদ্যা, জৈব-রসায়ন, বংশগতিবিদ্যা অভিব্যক্তি প্রভৃতি বিষয় বুঝতে সাহায্য করে।
j. কোনো জায়গায় বিশেষ জীব প্রজাতির বসবাস থেকে সেখানকার পরিবেশ সম্পর্কে ধারণা করা যায়। যেমন-Colpidium দূষণ-অধ্যুষিত জলে বাস করে, কোনো বিশেষ জীবাশ্মের উপস্থিতি সেই স্থানে কয়লা বা পেট্রোলিয়ামের সন্ধান দেয়।
k. ট্যাক্সোনমির জ্ঞান গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি বন্য জীব প্রজাতিকে শনাক্ত করতে ও প্রাকৃতিক সম্পদ হিসেবে এর সংরক্ষণ করতে সাহায্য করে।
l. বনভূমি সৃজন, পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ট্যাক্সোনমির জ্ঞান থাকা প্রয়োজন।