কুটির শিল্প না হলে কোনো দেশ বা রাজ্যের উন্নতি হয় না। আজকে আমরা আলোচনা করো পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সম্পর্কে।
পশ্চিমবঙ্গের ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প :
পশ্চিমবঙ্গের যে সকল স্থান গুলি ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের জন্য খ্যাতি অর্জন করেছে সেগুলি হলো-
● পোশাক তৈরি শিল্প : রাজ্যের প্রায় 713 টি নথিভুক্ত পোশাক তৈরির কারখানা হাওড়া, ডোমজুর, বজবজ, মেটিয়াব্রুজ, সন্তোষপুর, মহেশতলা, বাঁকুড়াতে আছে যেখানে আধুনিক ডিজাইইনের জামা, প্যান্ট তৈরি হয়।
● চর্ম শিল্প : রাজ্যের প্রায় 538 টি ট্যানারি পার্কসার্কাস, বানতলা, বাটানগর, উলুবেড়িয়াতে গড়ে উঠেছে।
● তাঁত শিল্প : রাজ্যের প্রধান কুটির শিল্প হল হ্যান্ডলুম। রাজ্যে প্রায় 3.5 লক্ষ তাঁতকল আছে। নদিয়ার ফুলিয়া ও শান্তিপুর, হুগলির বেগমপুর,
বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর, ফরাসডাঙা ও ধনেখালি, উত্তর 24 পরগণার বসিরহাট প্রসিদ্ধ।
● রেশম শিল্প : ভারতীয় সিল্ক বোর্ডের অধীনে রেশমকীট পালন, রেশন সংগ্রহ (সেরিকালচার), সিল্কের শাড়ি তৈরি হয় মুরশিদাবাদের বেলডাঙা, মুরশিদাবাদ, মালদহের সুজাপুর, কালিয়াচক, বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর, পুরুলিয়া, বীরভূমে।
● খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্প : চালকল হুগলি, বীরভূম, বাঁকুড়ায়; আটা/ময়াদা কল কলকাতা ও হাওড়া, ডেয়ারি শিল্প ডানকুনি, হরিণঘাটা, মাদারিহাটে। জ্যাম, জেলি, আচার, চাটনি, স্কোয়াশ, সস, মালদহ, দার্জিলিং, কার্শিয়াং, কালিম্পং, শিলিগুড়িতে; হালকা পানীয় শিল্প তারাতলা, ডানকুনি, কল্যানী, বহরমপুর; মাংস ও পোলট্রি শিল্প হুগলির আরামবাগে গড়ে উঠেছে।
● বিড়ি শিল্প : ঝাড়গ্রামের বিনপুর, ঝাড়গ্রাম; মুরশিদাবাদের ঔরঙ্গাবাদ, রঘুনাথগঞ্জ, পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশিয়াড়ী, উত্তর ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগণা, বাঁকুড়া, পুরুলিয়াতে কেন্দুপাতা শুকিয়ে বিড়ি উৎপাদন করা হয়।
● ক্ষুদ্র ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প : হাওড়া, বেলঘরিয়া, উলুবেড়িয়া, বর্ধমান, দুর্গাপুর, আসানসোল, রানিগঞ্জ,বাঁকুড়া, মেজিয়া, বড়জোড়া, পুরুলিয়া, ডানকুনি, শ্রীরামপুর, মেদিনীপুর, খড়গপুরে ছোট ইস্পাত ও যন্ত্রপাতি উৎপাদন শিল্পের প্রসার লাভ করেছে।
● শঙ্খ ও ঝিনুক : পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথি, দিঘাতে শামুক ও ঝিনুক থেকে শাঁখ, ল্যাম্পশেড, পর্দা, পুতুল উৎপাদন করা হয়।
● মৃৎশিল্প : কলকাতার কুমোরটুলি মাটির মূর্তি, নদিয়ার কৃষ্ণনগর মাটির পুতুল, বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরে পোড়া মাটির বিভিন্ন মূর্তি (টেরাকোটা) জগৎ বিখ্যাত। সব জেলায় কুমোরেরা মাটির হাঁড়ি, কলসি, ভাঁড়, টব, সরা উৎপাদন করেন।
● গালা শিল্প : পুরুলিয়ার ঝালদা, বাঁকুড়ার সোনামুখীতে লাক্ষাকীট থেকে গালার বিভিন্ন জিনিস তৈরি করা হয়।
● গুড় শিল্প : বাঁকুড়া ও পুরুলিয়ায় খেজুর, তাল ও আখের রস থেকে গুড় তৈরি শিল্প প্রসার লাভ করেছে , এছাড়াও নদীয়ার মাজদিয়া গুড় উৎপাদনে প্রসিদ্ধ।
● ধাতু শিল্প : বাঁকুড়া, খাতড়া, বিষ্ণুপুর, পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটল, পূর্ব মেদিনীপুরের চণ্ডীপুর, মুরশিদাবাদের বহরমপুর, খাগড়ায় পিতল ও কাঁসার বাসনপত্র, ঘট, প্রদীপ, পুতুল; বীরভূমের বোলপুরে তামা ও ব্রোঞ্জের শৌখিন দ্রব্য, দেবদেবীর মূর্তি, পুতুল প্রভৃতি উৎপাদিত হয়।
● স্বর্ণ শিল্প : কলকাতার বউবাজার, সিঁথি, দমদমে এই শিল্প গড়ে উঠেছে।
● লৌহ দ্রব্য শিল্প : কৃষ্ণনগর, কাঞ্চনপুরে লোহার ছুরি, ছেনি, কাঁচি, হাতুড়ি, দা, কোদাল, কাস্তে, কুড়ুল উৎপাদিত হয়।
● মাদুর শিল্প : পশ্চিম মেদিনীপুরের সবং, পিংলাতে মাদুর কাঠি চাষ, মাদুর বোনা, শীতলপাটি তৈরি; সুন্দরবনে হোগলা ও বেত থেকে মাদুর ও পাটি তৈরির কাজ প্রসিদ্ধ লাভ করেছে। তরাই অঞ্চলে বাঁশ ও বেতের জিনিসপত্র উৎপাদিত হয়।
● অন্যান্য শিল্প : মুরশিদাবাদে হাতির দাঁতের নানা শৌখিন জিনিস তৈরি শিল্প; দার্জিলিং, কার্শিয়াং-এ পশম ও পশমবস্ত্র শিল্প; পিংলা, সবং, নন্দীগ্রাম, নন্দকুমার পটচিত্রে শিল্প, ঝাড়গ্রাম, গড়বেতা, চন্দ্রকোণায় শালপাতায় বাসন শিল্প, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুরে কাজুবাদাম শিল্প, পূর্ব মেদিনীপুর ও সুন্দরবনে লবণ শিল্প বিস্তার লাভ করেছে।