সুপ্রিয় বন্ধুরা আজকের এই পর্বে আপনাদের সাথে আলোচনা করলাম চিত্রা কাব্যগ্রন্থর জীবনদেবতা ভাবনা সম্পর্কে।
চিত্রা কাব্যগ্রন্থর জীবনদেবতা ভাবনা সম্পর্কে আলোচনা করো :
‘চিত্রা’ কবিতাগ্রন্থের সবচেয়ে আলোচিত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল “জীবন দেবতা”। এটি শুধু ‘চিত্রা’ কবিতাগ্রন্থেই নয়, ‘সোনার তরী’ ‘চিত্রা’ পর্যায়ের এমনবি সমগ্র রবীন্দ্র কবিতা সাধনারই একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কেননা, ‘চিত্রা’ পর্যায়ে এর কথা প্রত্যক্ষভাবে এলেও ‘চিত্রা’ র পূর্বে এবং পরবর্তীকালেও এই প্রসঙ্গটিকে বিভিন্ন ইঙ্গিতে প্রতিফলিত হতে দেখা যায়।
কবিদের অনেকের কবিত্ব শক্তিই যে অলৌকিক প্রেরণা থেকে উদ্ভুত, তা বিশ্বের বহু কবির ক্ষেত্রেই একটি স্বীকৃত সত্য। আদি কবি বাল্মীকি বা হোমার থেকে শুরু করে বাংলা সাহিত্যে মধ্যযুগের কবিকুলের অনেকই এমনকী আধুনিক যুগের কবি মধুসূদন পর্যন্ত এই প্রেরণার কথা স্বীকার করেছেন।
মধ্যযুগের অন্যতম কবি মুকুন্দ চক্রবর্তী যখন এই ভাষায় বলেন-‘হাতে লইয়া পত্রমসী আপনে কলমে বসি/নানা ছন্দে লিখিলা সংগীত’ ঠিক এই কথারই প্রতিধ্বনি মনে হতে পারে রবীন্দ্রনাথের কবিতার এই দুই পংক্তি ‘মোর কথা লয়ে তুমি কথা কহ/মিলায়ে আপন সুরে।’ আপাত ভঙ্গিতে কবির এই অনুভূতি কাব্য প্রেরণার উৎস বলে মনে হলেও, প্রকৃত পক্ষে রবীন্দ্রনাথের জীবনদেবতার অনুভূতির সঙ্গে একে এক করে দেখা চলে না। কেননা জীবন দেবতার অনুভূতি কবির কাছে ছিল একেবারেই নিজস্ব ও অভিনব। শুধুমাত্র কবির কবিত্বের প্রেরণাশক্তি নয়, ব্যাপক ভাবে তা কবির সুখ-দুঃখ, ভাবনা-চিন্তা, কর্মজীবন, ইহকাল, পরকাল তথা জন্ম-জন্মান্তরের জীবন ভাবনাকে পরিচালিত করেছে এই শক্তি।
রবীন্দ্রকবিতার কখনো সে দেখা দিয়েছে অচেনা নাবিক হয়ে, আবার কখনো রহস্যময় অপরিচিত বিদেশিনী হয়ে কবিকে ভাসিয়ে নিয়ে গেছেন নিরুদ্দেশ যাত্রায়। আবার কখনো বাল্যে খেলার সঙ্গিনী হয়ে বা যৌবনে ‘মর্মের গেহিনী’ ‘জীবনের অধিষ্ঠাত্রী দেবী রূপে, কবির জীবন ও সৃষ্টিকে পরিচালিত করেছেন। এমনকি মৃত্যুর পরপারে নবজীবনেও কবি এই জীবন দেবতার দেখা পেয়েছেন। সুতরাং রবীন্দ্রনাথের জীবন দেবতা ভাবনার সঙ্গে আর কোনো কবির এই শ্রেণীর কবিত্ব প্রেরণার তুলনা চলে না।
পড়ুন : চিত্রা নামকরণে ছবির ইশারা আলোচনা করো
কিন্তু প্রশ্ন হল- কে এই জীবনদেবতা তার স্বরূপই বা কী ? এ নিয়ে সমালোচকদের বিভিন্ন মতভেদ ও মতান্তরও আছে। কারো ব্যাখ্যার এই জীবনদেবতা কবির গভীরতম অন্তর সত্তা তাঁর কাব্য প্রেরণার মূলশক্তি, কারো ব্যাখ্যার তা অধ্যাত্মচেতনার সঙ্গে যুক্ত মহাচৈতন্যের নামান্তর। কখনোবা তাকে সৌন্দর্যবাদ বা নিসর্গ অনুভূতির সাথে মিলিয়ে দেখা হয়েছে। আবার কারো ব্যাখ্যার তা বিশ্বদেবতার নামান্তর। সমালোচক অজিতকুমার চক্রবর্তী জীববিজ্ঞানের অভিব্যক্তিবাদের সঙ্গে মিলিয়ে জীবনদেবতাকে দেখেছেন।
আবার ক্ষুদিরাম দাস কবির ব্যক্তিচৈতন্য এবং সমাজ চৈতন্যের অন্যেন্যাশ্রয়গত দ্বন্দ্বের ভূমিকায় জীবন দেবতার স্বরূপ অনুধাবন করার চেষ্টা করেছেন। সব মিলিয়ে বিচিত্র ভাবে ও বিচিত্র দৃষ্টি ভঙ্গিতে রবীন্দ্রনাথের জীবনদেবতাবাদের স্বরূপ ব্যাখ্যার চেষ্টা হয়েছে। আমরা এই সমস্ত ব্যাখ্যার কোনটিকেই অস্বীকার করতে চাই না। আবার কোনো একটি ব্যাখ্যাকে অন্ধ অনুসরণ করতে চাই না। তবে মূল আলোচনার প্রবেশ করার আগে রবীন্দ্রনাথ স্বয়ং এ ব্যাপারে কী বলেছেন একটু দেখে নেব।
রবীন্দ্রনাথ জীবনদেবতা সম্পর্কে যে সমস্ত কথা বলেছেন, সেগুলি ঠিক এর স্বরূপটিকে পরিষ্কার করেনি, বরং অনেক ক্ষেত্রে নানা জটিলতারও দেখা দিয়েছে । তবে জীবন দেবতা সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথের বক্তব্য মোটামুটি ‘মেটাফিজিক্যাল’ বা আধ্যাত্মিক সত্তাটিকেই প্রকাশ করেছে।
এই সত্তাই অনাদি কাল ধরে বিচিত্র বিস্মৃত অবস্থার মধ্য দিয়ে কবিকে বর্তমানের প্রকাশের মধ্যে উপনীত করেছে। এই সত্তাই কবির অন্তর্নিহিত সৃজনশক্তিরূপে ‘জীবনের সমস্ত সুখ-দুঃখকে, সমস্ত ঘটনাকে ঐক্য দান তাৎপর্য দান’ করছে। কবির রূপ,রূপান্তর জন্ম,জন্মান্তরকে এক সূত্রে গেঁথেছে এবং সেই সত্তার মধ্যে দিয়েই কবি বিশ্বচরাচরের মধ্যে সঙ্গে অনুভব করেছেন
জীবনদেবতার স্বরূপ উৎঘাটনে রবীন্দ্রনাথের এই ব্যাখ্যা নির্দেশকে বলা যেতে পারে কিছুটা ‘গাইড লাইন’ দেওয়ার মতো। কিন্তু তার মানে এই নয় যে রবীন্দ্রনাথের নির্দেশ আমাদের নির্বিচারে মেনে নিতে হবে। জীবন দেবতা সম্পর্কে আর পাঁচজন পাঠক সমালোচকের ব্যাখ্যার মতোই রবীন্দ্রনাথের ব্যাখ্যাও ছিল একটি বিশিষ্ট মত। তবে এই ব্যাখ্যা অন্য সকলের থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ কেননা তা রবীন্দ্রনাথের মতো একজন বিশিষ্ট মানুষের সমালোচনা। তাছাড়া জীবনদেবতা তো তাঁরই অনুভব।
প্রথমেই ‘অন্তর্যামী’ কবিতাটির প্রসঙ্গ আসে। শুরুতেই কবি এক নারীর কল্পনা করেছেন যিনি কৌতুকময়ী। নিত্যনতুন কৌতুকে কবির উপর কর্তৃত্ব করছেন। অর্থাৎ কবি যেন নিজস্ব শক্তি রহিত। আর সেই নারী কবিকে সৃষ্টিকর্মে চালনা করছেন তার মতো করে “অন্তর মাঝে বসি অহরহ/মুখ হতে তুমি ভাষা কেড়ে লহ,/মোর কথা লয়ে তুমি কথা কহ/মিশায়ে আপন সুরে।”
কবি তাঁর সামান্য জ্ঞান ও অভিজ্ঞতায় যা লিখতে চাইছেন তা হল, সেই নারী যেন তাকে এমন ভাবে লিখিয়ে নিচ্ছেন যাতে ওই লেখা সেই অধিত জ্ঞান এবং অভিজ্ঞতার অতিরিক্ত এক অসাধারণ সৃষ্টি হয়ে উঠছে- “যে কথা ভাবিনি বলি সেই কথা/যে ব্যথা বুঝি না জাগে সেই ব্যথা/জানি না এনেছি কাহার বারতা/ কারে শুনাবার তরে।”
প্রথম স্তবক থেকে দ্বিতীয় স্তবকে এসে কবিতাটির নতুন মোড় নিয়েছে। শুধুমাত্র কবির সৃষ্টিকর্মেই নয়, জীবনের সব সুখ-দুঃখ ময়, কর্মময়, বাস্তব জীবনের চালিকা শক্তি হিসাবেও সেই নারীর ভূমিকা রয়েছে-‘যে দিকে পান্থ চাহে চলিবারে/চলিতে দিতেছ কই?’ অর্থাৎ যা ছিল কবির ব্যক্তিগত তা থেকে জীবনদেবতার ভূমিকা সামাজিক বা বাস্তব জীবনের ক্ষেত্রেও নেমে এল ‘কভু বা পন্থ গহন জটিল, কভু পিচ্ছল ঘনপঙ্কিল,/কভু সংকটছায়া শঙ্কিল বঙ্কিম দুরগম”।
পরের পর্যায়ে এসে কবিতাটিতে এই অন্তর্যামী নারীকে কবি সৌন্দর্যময়ী রহস্যময়ী করে দেখেছেন এবং এখানে কবি এই নারীকে ব্যক্তিজীবনের ক্ষেত্র থেকে বিশ্বচেতনার অসীমতায় এমনকি জন্ম জন্মান্তরের বোধে অনুভব করেছেন। “
অন্তর্যামী কৌতুকময়ী নারীই এই কবিতাতে পুরুষ হয়ে দেখা দিয়েছেন। জীবন ও কর্মের সমস্ত বিফলতাগুলিকে অন্তরতমের পায়ে সমর্পন করে তিনি নিজেকেও উৎসর্গ করেছেন। তাঁর একান্ত প্রার্থনা- “নূতন করিয়া লহ আরবার/চিরপুরাতন মোরে/নূতন বিবাহে বাঁধিবে আমায়/ নবীন জীবন ডোরে।”-অর্থাৎ এখানেও জন্মান্তরের চেতনা।
এখানে দেখা যাচ্ছে যে যা প্রথমে ছিল কবির ব্যক্তিগত কল্পনার জগতে, তা থেকে জীবনদেবতা কবির সুখ দুঃখময় বাস্তবের সঙ্গেও মিশে যাচ্ছে এবং তা থেকেই ক্রমশ বিশ্ব জীবনের বৃহত্তর ক্ষেত্রে বিশ্বচেতনার সঙ্গে ব্যাপ্ত হয়ে যাচ্ছে। সব শেষে কবির জন্ম জন্মান্তরের চেতনার সঙ্গে যুক্ত হয়ে বিশ্ব অস্তিত্বের চিরন্তন অসীমতায় পৌঁছে যাচ্ছে।
পড়ুন : চিত্রা কাব্যে রবীন্দ্রনাথের সৌন্দর্য মনস্কতা : বিজয়নী ও অন্যান্য
‘চিত্রা’র শেষ কবিতা সিন্ধুপারেতে সেই জীবনান্তরে অন্য লোকে জীবন দেবতার সঙ্গে কবির বহু অভিলাষিত বাস্তব মিলনের কল্পনামদির ছবি আছে। জীবন দেবতা এখানে রহস্যময়ী মৃত্যুর দৃঢ় রূপক হয়ে কবিকে ইহজীবনের পরপারে; মৃত্যুর অজানা লোকে নববিবাহের মধ্যে দিয়ে দেখা দিয়েছেন। কল্পনার জগত থেকে বাস্তবের বৃহত্তর জীবনে’ তা থেকে বিশ্বজীবন তথা জন্ম জন্মান্তরের চেতনায় পৌঁছে যাওয়া কবির ‘ব্যক্তি আমি’ থেকে ‘বৃহত্তর আমি’তে উত্তরণপর্ব পরিপূর্ণতা পেয়েছে।
জীবনদেবতাকে যাঁরা রবীন্দ্রনাথের অন্তরবাসী শিল্পীসত্তা বা তাঁর সুজনীপ্রতিভা তথা কাব্যপ্রেরণার মূল শক্তি হিসেবে দেখতে চান তাঁরা রবীন্দ্র ব্যখ্যার দ্বারাই বেশী প্রভাবিত হয়েছেন। ‘আত্মপরিচয়’ প্রবন্ধে কবির বক্তব্যটি এখানে তাঁদের কথাকেই সমর্থন করে বেশি। একথা ঠিক যে জীবনদেবতা ভাবনার অনেকটা জুড়েই অন্তরতম দেবতার দ্বারা কবির সৃষ্টির জীবন চালিত হওয়ার কথা আছে।
জীবনদেবতাকে ‘মেটাফিজিক্যাল’ বা আধ্যাত্মিকতার দিক থেকে বিচার করাটা সম্বাবত নিরাপদ নয়। রবীন্দ্রনাথের জীবনে তথা কবিতায় অধ্যায়ভাবনা বলতে যা বোঝায় তা এসেছিল আরো পরে ‘নৈবদ্য’, ‘গীতাঞ্জলি’-তে। সম্ভবত রবীন্দ্রনাথ ‘মেটাফিজিক্যাল’ বলতে ঠিক ওই অর্থে অধ্যাত্মিকতার কথা বলেন নি। কেননা জীবন দেবতা তাঁর আত্মপ্রকৃতির নিয়ন্তা হলেও তাকে কখনই বিশ্বপ্রকৃতির নিয়ন্ত্রা হিসেবে কবি বর্ণনা করেননি।
এখানে কবি বলতে চেয়েছিলেন তাঁর ব্যক্তিগত বা আত্মগত আমির অতিরিক্ত আর এক সত্তার কথা। কবির ব্যক্তি-আমি এতদিন যে আত্মমগ্ন কল্পনার ভাবের গণ্ডির মধ্যেই সীমায়িত ছিল, তা যেন বাস্তবের সংঘাতে অন্যতর সত্তা বা শক্তি হয়ে উঠেছে। অধ্যাপক ক্ষুদিরাম দাস এভাবেই ‘ব্যক্তি আমি’ ও ‘সমাজগত আমি’-র অন্তর্দ্বন্দ্বের পটভূমিকায় জীবনদেবতাকে দেখেছেন কবির ব্যক্তি-আমির অতিরিক্ত আত্মবোধ-রূপে।
ক্ষুদিরাম দাস যাকে অতিরিক্ত আত্মবোধ বলেছেন, তা যখন বিশ্ব প্রেক্ষাপটে স্থাপিত হচ্ছে, তখন ব্যক্তি অস্তিত্ব ও বিশ্ব অস্তিত্ব একাকার হয়ে যাচ্ছে। জন্ম জন্মান্তরের রূপ রূপান্তরের বিবর্তন ধারায় এই দুইয়ের অস্তিত্বের সংযোগ যা কবি বলেছেন, তাকেই অজিত চক্রবর্তী ডারউইনের অভিব্যক্তিবাদের তত্ত্বব্যাখ্যার মধ্যে দিয়ে প্রমাণ করতে চেয়েছেন। আবার এই অতিরিক্ত আত্মবোধের চরম সত্তাকে হিন্দু দর্শনের অদ্বৈতবাদ বা উপনিষদের জন্মান্তরবাদের সঙ্গে মিলিয়ে দেওয়া যায়। কিন্তু তা কখনই রবীন্দ্রনাথের জীবনদেবতার সমর্থক হয়ে ওঠে না।
পড়ুন : পথের পাঁচালী উপন্যাসের সর্বজয়া চরিত্র
রবীন্দ্রনাথের জীবনদেবতা কোনো নব উদ্ভুত তত্ত্ব বা দর্শন নয়। রবীন্দ্রনাথ কোনো বিশেষ তত্ত্ব হিসেবেও এর কোনো প্রবর্তন করেননি। কবির ব্যক্তিজীবন তথা ‘আত্মগত আমি’-র সঙ্গে ‘বিশ্বগত আমি’র সম্পর্কই জীবনদেবতার মূল বলে আমাদের মনে হয়। কবি হিসেবে এতদিন তিনি ছিলেন ব্যক্তিগত আত্মকল্পনায় মগ্ন। মানুষের ব্যক্তিগত জীবন যেমন খণ্ডিত; তেমনি তার অস্তিত্বের চেতনার দ্বান্দ্বিক সম্পর্ককেই সুতরাং জীবনদেবতা হিসাবে চিহ্নিত করতে পারি। জীবনদেবতার ভাবনা রবীন্দ্র কবিমানসের ধারাবাহিক ইতিহাসের একটি বিশেষ স্তর হিসেবেই এসেছে।
আবার বিশেষভাবে তত্ত্বের বাহক হিসাবে বিজ্ঞান বা দর্শনের তত্ত্বরূপের কবিতাও বলা যাবে না। জীবন মৃত্যু, ব্যক্তি অস্তিত্ব ও বিশ্ব অস্তিত্ত্বের দ্বান্দ্বিক পটভূমিকায় মানব-জীবনের যে চিরন্তন অস্তিত্ব বর্তমান সেই আদি অন্তহীন অস্তিত্বই জীবন দেবতা। তাত্ত্বিক কল্পনাবোধের গদ্যময়তা নয়, ছন্দের হিল্লোলে; অলংকারের জ্যোতিতে, বাক-প্রতিমার ইন্দ্রজালে এবং ভাব ও দর্শনের অনবদ্য মিলনে জীবনদেবতা শ্রেণির কবিতাগুলি সার্থক হয়ে উঠেছে।